গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়েছে একটি ‘ম্যাকাও’। সপ্তাহ খানেক আগে বাচ্চার জন্মের বিষয়টি জানতে পারে কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২২ মে) সকালে বন সংরক্ষক ও সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক ইমরান আহমেদ জানান, দেশের কোথাও এর আগে ম্যাকাও পাখির বাচ্চা জন্মেনি। এটিই প্রথম কোনো ম্যাকাও পাখির বাচ্চা ফুটলো।
দেশে প্রথমবারের মতো আমাজন জঙ্গলের উন্মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা পাখি সাফারি পার্কে একটি বাচ্চার জন্ম দেওয়ায় এ ভিন্ন আনন্দ বিরাজ করছে সবার মাঝে। সদ্য ফোটা বাচ্চাটির লিঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছে, বহুদিন চেষ্টা করে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করায় এ সফলতা পাওয়া গেল। তাদের দাবি, সবার প্রচেষ্টায় এ সফলতা। আরও বেশ কিছু পাখি ডিম দিতে পারে বাচ্চাও ফোটাতে পারে। তাদের দিকে আলাদা নজরদারি করা হচ্ছে। মেটিং করা পাখিগুলোকে দর্শনার্থীদের বিরক্ত করা থেকে নিরাপদ অবস্থানে রাখা হয়েছে। আর এতেই প্রথমবার সফলতা এসেছে। আরও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে পার্কের পাখিশালায়।
এ বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ শিবলী সাদিক বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, দেশে এটাই প্রথম কোনো ম্যাকাও পাখি বাচ্চা ফোটাল। ব্রাজিলের আমাজন ফরেস্টে উন্মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর পাখি ম্যাকাওয়ের বাচ্চা দেওয়ার ঘটনার বিরল দৃষ্টান্ত হলো সাফারি পার্কে। যখনই কোনো পাখি যুগলের মেটিং করা চোখে পড়বে, তখনই সুবিধামতো এদের আলাদা স্থানে নীরবে বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
জানা যায়, দৃষ্টিনন্দন এ পাখিগুলো দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গলে বসবাস করে। সেখানেই উপযুক্ত পরিবেশে নিয়মিত বাচ্চার জন্ম দেয়। এদের আদি নিবাসও আমাজন জঙ্গল। এদিকে ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিল, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, পেরুর বনাঞ্চলে পাখিগুলোকে অবাধে বিচরণ করতে দেখা যায়। গ্রিন ম্যাকাও ও রেড ম্যাকাও চোখে পড়ে এসব বনের গাছে গাছে। খুব নিরিবিলি পরিবেশ পেলে এরা বাসায় ডিম দেয়। পরে ডিমে নিয়মিত তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান বলেন, ‘ম্যাকাও বেশ মূল্যবান পাখি। পৃথিবীজুড়েই এদের কদর আকাশ ছোঁয়া। দেখতেও বেশ নান্দনিক, আকর্ষণীয়। আবদ্ধ (ক্যাপটিভে) পরিবেশে ৩০-৫০ বছর বাঁচে ম্যাকাও আর প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঁচে ২০-৩০ বছর পর্যন্ত। ফলমূল ও বিভিন্ন ফলের বীজ এদের প্রিয়। পাখির ওজন এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ম্যাকাও সাধারণত একসঙ্গে ৩টি ডিম দেয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ১ থেকে ২টি বাচ্চার জন্ম হয়। পালা করে বাবা ও মা পাখি ডিমে তা দেয়। ২৮ দিনের মতো তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় পাখি যুগল।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক ইমরান আহমেদ বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো ম্যাকাও পাখির বাচ্চার জন্ম হওয়ায় আমরা খুশি। বাচ্চার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে বলেছি। আমরা এ ঘটনার মধ্যদিয়ে উৎসাহিত হয়েছি।