রাজনৈতিক ক্ষমতার দুর্বৃত্তায়ন,দখলদার ভূমিদস্যুদের দাপট আর পৌরকর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বৈধভাবে একটি হাটের ইজারা পেয়েও ইজারাদার প্রাণনাশের হুমকিতে অসহায়ভাবে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তবু পাননি কোন প্রতিকার।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রেলস্টেশন এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী এবং অতিপুরাতন হাটের নাম “রোড বাজার”। ১৯৯৮ সালের পর থেকে একশ্রেনির ক্ষমতাধর ব্যক্তির নজর পড়ে এই বাজারটির ওপর। এই দখলদার ও ভূমিদস্যুরা বহিরাগত ব্যববসায়ীদের উক্ত হাট থেকে বের করে দিয়ে হাটের জায়গা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দখল করে নেয়। এমন দখল কান্ডে অসহায় হয়ে পড়েন বহিরাগত ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা।
এরপর হাজী সেলিম নামে একজন ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা মন্দির পাড়ায় সমবায় সমিতির ফাকা মাঠে বাজার বসায় এখন যেটা আড়ত নামে পরিচিত। সেই সময় হতে ১৪২৯ পর্যন্ত উক্ত হাট বাজারের কোন প্রকৃত ইজারাদার ছিলনা। পৌর কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি আর উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে দখলদারেরা নিজেদের মধ্যে একজনের নাম দিয়ে নামমাত্র টাকা প্রদান করে কাগজে কলমে ইজারা দেখিয়ে আসছিল।
চলতি বাংলা সনের হাট বাজার ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রচার হলে সৈয়দ আব্দুল করিম নামের একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়ে ইজারার মূল্য সহ ভ্যাট,আয়কর ও জামানত বাবদ ১,৪৪,২৯৯ টাকা পরিশোধ করে ১৪৩০ বাংলা সনের ঠাকুরগাঁও রোড হাট বাজার হতে টোল আদায়ের অনুমতি পান।
সৈয়দ আব্দুল করিম অভিযোগ করে বলেন, অনুমতি পেয়ে গত ১ বৈশাখ ১৪৩০ তারিখে ইজারা প্রাপ্তির পর কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে ইজারাদার লোকজন সহ ঠাকুরগাঁও রোড হাট বাজারে টোল আদায় করতে গেলে দখলদাররা একজোট হয়ে টোল আদায়ে বাধা প্রদান করেন। পরবর্তীতে আবার টোল আদায় করতে গেলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি ইজারাদার তাৎক্ষনিকভাবে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়রকে অবগত করেন এবং ঘটনাস্থলে এসে হাট বাজারের কার্যক্রম বুঝিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন; কিন্তু পৌর মেয়র বা পৌরসভার কোন প্রতিনিধি ঘটনা তদন্তে কিংবা ব্যবস্থা নিতে ঘটনাস্থলে আসেননি।
এর আগেও কার্য্যাদেশ নেয়ার সময় পৌরসভার দরপত্র কমিটির আহবায়ক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ইজারাদার উক্ত হাট বাজার এর কার্যক্রম বুঝিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন কিন্তু তিনিও কোন দিক নির্দেশনা দেন নাই। এমতাবস্থায় নিরাপত্তার স্বার্থে ইজারাদার উক্ত ঠাকুরগাঁও রোড হাট বাজারের টোল আদায় থেকে বিরত থাকেন এবং পুরো বিষয়টি সবিস্তারে উল্লেখ করে ইজারা পাওয়ার পর “পৌর কর্তৃপক্ষের ”অসহযোগীতা ও দখলদারদের বাধা ও হুমকির কারণে টোল আদায় করতে না পারায় কার্যাদেশ বাতিল করতঃ ইজারার মূল্য সহ ভ্যাট আয়কর ও জামানত বাবদ সমুদয় অর্থ ফেরত দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করছেন ।
জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান ইজারাদারকে বলেন, বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের পূর্ন ক্ষমতা প্রদান করা আছে। তারা ব্যর্থ হলে বা আমার সহযোগীতা চাইলে সেটা করতে আমি প্রস্তুত আছি।
বিষয়টি নিয়ে ইজারাদার সৈয়দ আব্দুল করিম আরও বলেন ‘পৌরসভার কাগজে কলমে হাট বাজার থাকলেও বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। পুরো বাজারটি স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা অথবা তাদের পরিবারের সদস্যরা দখল করে ভাড়া ও চাঁদা বাবদ মাসে পঞ্চাশ লাখের অধিক টাকা আদায় করে থাকে। পুরো হাট এলাকায় হাজার খানেক পাকা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এই বাজারে প্রতি ১০ বঃফুঃ জায়গা ৪০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানে কেউ দোতলা করতে চাইলেও নির্দিষ্ট হারে দখলদার কমিটিকে টাকা দিতে হয়”।
সরকারি হাট বাজার সমুহের ইজারা পদ্ধতি, ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ২নং ধারায়(আপত্তি/আপিল নিষ্পত্তি) ইজারা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকলে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন ও এর নিষ্পত্তি বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকলেও জেলা প্রশাসক পুরো বিষয়টি পৌরসভার দিকে কেন ঠেলে দিচ্ছেন তা নিয়েও তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।,
অবিলম্বে ঠাকুরগাঁও রোড বাজার এলাকাটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে দখলদারদের হটিয়ে প্রকৃত ইরাজাদারকে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।