ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটি উৎসবের একটি পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। তাদের কাছে একটি আনন্দের দিন। বছরে একটিবার দিনটি আসে বলে সবাই পরিবার পরিজনের সাথেই দিনটি কাটাতে চায়।
তাই রাস্তা জ্যাম, অতিরিক্ত ভাড়া, ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা, টিকেট কাটতে গিয়ে বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মত ভোগান্তি উপেক্ষা করে মানুষ ফেরে পরিবারের কাছে। কিন্তু নানা কারণে ঈদের ছুটিতেও ক্যাম্পাসে রয়ে গেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কিছু শিক্ষার্থী। কারো সামনে বিসিএস লিখিত পরীক্ষা, কারো বিভাগের পরীক্ষা অ্যাসাইমেন্টের চাপ আবার কেউবা ক্যাম্পাসে ঈদ করছেন ক্যাম্পাস জীবনকে নানা রঙে রাঙিয়ে তুলতে।
গত ৭ জুলাই থেকে ঈদের ছুটি শুরুর দু-একদিন আগ থেকেই শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে থাকে সর্বদা সরগরম থাকা ক্যাম্পাস। হল খোলা থাকায় অনেকে ক্যাম্পাসেই ঈদ করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে পুরো ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে গেলে তারাও চলে যায়। তবে শেষ অবধি হলে থেকে যায় ২২৬ জন শিক্ষার্থী। পরিবার পরিজন ছাড়া এবার বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে ঈদ উদযাপন করেছেন তারা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেই জামাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। নামায শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে সবাই মেতে ওঠে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে।
বুকে জড়িয়ে ধরে বন্ধু ও সহপাঠীদের। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার অংশগ্রহণে পুরো মসজিদ প্রাঙ্গণ যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। অগ্রজ-অনুজদের শুভেচ্ছা, সালামির আবদার ইত্যাদি সবাইকে যেন গত কয়েকদিনের একাকিত্ব ভুলিয়ে দেয়। প্রথমবার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঈদ করতে পারার অনাবিল আনন্দে উদ্বেলিত তারা। তবে বাহিরে উচ্ছ্বসিত থাকলেও হৃদয়ে জাগরুক ছিল পরিবার-পরিজনদের স্মৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শামীম রেজা। কিছুদিন পরেই পরিসমাপ্তি ঘটবে বিশ^বিদ্যালয় জীবনের। তাই ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিকে আরও মধুর করতে এবার ঈদ করছেন সহপাঠীদের সাথে। ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপনের অনুভূতি জানিয়ে শামীম রেজা বলেন, প্রতিবছর নিজ এলাকায় ঈদ করা হয়। কিন্তু এবছরই আমার ক্যাম্পাস জীবন তথা একাডেমিক জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। তাই খুব ইচ্ছা হলো ক্যাম্পাসে একটা ঈদ উদযাপন করব। জীবনে তো আর কখনো এরকম সময় সুযোগ আসবে না।
তিনি বলেন, আজ সকাল থেকে পরিবারের জন্য একটু খারাপ লাগছিলো তবে একটা ভিন্ন রকমের অনুভূতিও কাজ করছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে চার-পাঁচজন বন্ধু, ছোট ভাই, বড় ভাই মিলে একসাথে গিয়ে নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে সবাই মিলে ফাঁকা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার, প্যারিস রোড, জোহা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করে ছবি তুললাম। রুমে ফিরে নিজেরাই সেমাই, পায়েস রান্না করে খেলাম। ভিন্ন এক অভিজ্ঞতায় কিছুক্ষণ আগের খারাপ মন এখন আনন্দে উদ্বেলিত।
বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম মুনায়েমের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। কিছুদিন আগের বন্যায় বাড়িতেই ছিলেন। পরে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ক্যাম্পাসে আসেন। তাই এবার আর বাড়িতে ঈদ করার ইচ্ছা নাই তার।
তিনি জানান, প্রতিবছর বাড়িতেই মা-বাবার সাথে ঈদ করি। কিন্তু মাত্র কিছুদিন আগেই বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছি। তাছাড়া আমাদের যাতায়াত অনেক ব্যয়বহুল ও ভোগান্তির। তাই এবার বন্ধুদের সাথেই ঈদ করলাম।
এ এক অন্যরকমের ভালো লাগা। নামাজ শেষে পরিচিত জনদের সাথে দেখা হয়েছে। সিনিয়র জুনিয়র অনেককেই খুঁজে পেয়েছি। সবার সাথে কুশলাদি বিনিময়, গল্প-আড্ডায় গত কয়েকদিনের নিঃসঙ্গতা আনন্দে রূপ নিয়েছে।
আরমান শরিফ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পরিবার পরিজন ছাড়া ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপন করার অনুভূতিটা একটু অন্যরকম। প্রথম দিকে কিছুটা বিষন্ন লাগলেও প্রকৃতিঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ সেটাকে কাটিয়ে দিয়েছে।
বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়র এবং কয়েকজন স্যারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ হয়েছে। সবমিলিয়ে জীবনে প্রথমবার পরিবারবিহীন ঈদ একটু ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা হলো।
উল্লেখ্য, গত ৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ছুটিতে যায় রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়। তবে শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় আবাসিক হলসমূহ খোলা রেখেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।
আর টাইমস/ এসএইচ