বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) শিক্ষার্থীরা।
ইনস্টিটিউটটির নীতিমালা অনুযায়ী নিজস্ব অর্থায়নে একটি হোস্টেল নির্মাণের উল্লেখ থাকলেও এখনো সেই হোস্টেল নির্মিত হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আবাসিক সুবিধা পেলেও নিজ অর্থায়নে ছাত্রাবাসে থাকতে হচ্ছে আইবিএ শিক্ষার্থীদের। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতি ও নিজেদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
এছাড়াও এই ইনস্টিটিউটটি নানা সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তাদের অভিযোগ, প্রতি সেমিস্টারে তাদের কাছ থেকে ৯ হাজার ২০০ টাকা করে ফি নেওয়া হলেও তাদের খাওয়ার জন্য কোন ক্যান্টিনের ব্যবস্থা নাই।
একটি গ্রন্থাগার থাকলেও তার অবস্থা অনেকটাই শোচনীয়। সেই গ্রন্থাগারে খুব স্বল্প পরিমাণ বই আছে যা শিক্ষার্থীদের কোন কাজেই আসে না বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। নামমাত্র কম্পিউটার ল্যাবের জন্যই প্রতি সেমিস্টারে ফি দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। এসব বিষয়ে একাধিকবার পরিচালক বরাবর আবেদন করেও কোন সমাধান পাননি শিক্ষার্থীরা।
বর্তমানে ৪টি বর্ষের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত রয়েছেন। আইবিএ’র নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী স্বতন্ত্রভাবে এর হোস্টেল থাকার কথা এবং এই কারণে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ হলগুলোতে সিট বরাদ্দ দেয়া হয় না। শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিক সুবিধা না দেওয়ায় তারা অনেকেই অবৈধভাবে বিভিন্ন হলে থাকছেন। এতে হল বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা সিট বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিকে তাদের জন্য নানা সময় হোস্টেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও ৬ বছরেও নেই কোনো দৃম্যমান উদ্যোগ। আইবিএ’র শিক্ষার্থীদের দাবি, পৃথক হোস্টেল না হওয়া পর্যন্ত তাদের অন্য হলগুলোতে আবাসিক সুবিধা দেয়া হোক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থী বলেন, আইবিএতে যারা পড়ে তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের। ফলে একসাথে ছাত্রাবাসে থাকা ও সেমিস্টার ফি দেওয়া তাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। দীর্ঘদিন থেকে হোস্টেল নির্মাণের কথা বলা হলেও এখন অবধি কিছুই হয়নি। এতে আমরা নিজেদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আবাসিক সুবিধার সাথে সাথে ক্যান্টিনের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শুনে আসছি ক্যান্টিন হবে। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর হয়ে গেলেও এখনো ক্যান্টিন চালু হয়নি। যেখানে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা হলের ডায়নিংয়ে ২৪ টাকায় খাচ্ছে সেখানে আমাদেরকে বিনোদপুরের হোটেলগুলোতে খাইতে হয়। যা অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ। প্রতি বেলা হোটেলে খাইতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ইনস্টিটিউটের এসব সমস্যা নিয়ে কিছু বলতে গেলে শিক্ষার্থীদেরকে চিহ্নিত করে রাখা হয় এবং তাদের রেজাল্ট বরাবরই খারাপ হয়। আমরা চাই আমাদেরকে দ্রুত আবাসিক সুবিধা দেওয়া হোক এবং আমাদের বিভিন্ন ফিগুলো কমানো হোক।
আইবিএ’র পরিচালক অধ্যাপক জিন্নাত আরা বেগম বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার অবর্তমানে পরিচালকের দ্বায়িত্বে আছেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আবাসিকতা তাদের ন্যায্য অধিকার। অনার্স চালুর সময় তাদের নীতিমালায় নিজস্ব হোস্টেলের বিষয়টি উল্লেখ ছিল কিনা এবং হোস্টেল তাদের নিজস্ব অর্থায়নে করবে নাকি প্রশাসনের মাধ্যমে করবে তা আমি জানতাম না।
আমি বিষয়টি মাথায় রাখলাম। যেহেতু আইবিএ’র পরিচালকও দেশের বাইরে তিনি আসলেই আমাদের প্রশাসন এবিষয়ে কথা বলে এ সমস্যা সমাধান করা হবে।