আবারো রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষকে পেটানোর ঘটনায় এখন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের এ দুই শীর্ষ নেতা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। একে অপরের দিকে ছুড়ছেন প্রতিহিংসার তীর। এতে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে এ দুই নেতাকে নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা ঝড়। এমন কি দুজন দুই মেরুতে থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। করছেন বিষাদাগার মনোভাব। তবে এর শেষ কোথায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলতে পারছেন না।
জানা গেছে, গত ৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত ৯টার দিকে রাজশাহী নগরীর থিম ওমর প্লাজায় রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। যা গত মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে অধ্যক্ষকে মারপিটের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর পুরো দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এতে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যান এমপি ফারুক চৌধুরী।
সমালোচনার মুখে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষকে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে এমপি দাবি করেন, তিনি অধ্যক্ষকে পেটাননি। বরং অধ্যক্ষরা তার চেম্বারে মধ্যে বাকবিতন্ডার শুরু করলে তিনি থামিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাও ভোল্ড পাল্টিয়ে স্বীকার করেন, তাকে এমপি পেটাননি। তবে সংবাদ সম্মেলনে এমপি ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষকে হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর এ ঘটনা রটানোর জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে দায়ি করেন।
তিনি সরাসরি বলেন, এই ঘটনা আসাদ ঘটিয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে তিনি উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি আসাদ এমপিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে মাঠে কাজ করছেন বলেও দাবি করেন তিনি । যদিও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, কি এমন ঘটনা ছিল যে খোদ এমপির সামনে অধ্যক্ষরা হাতাহাতির মত ঘটনায় লিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর অধ্যক্ষ না দিয়ে নিরব থাকেন। এতে আরো বেশি সমলোচনার সৃষ্টি হয়।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আসাদকে নিয়ে বক্তব্য দেয়ায় ফুঁসে উঠে আসাদ। তিনি বৃহস্পতিবার রাতেই ঘোষণা দেন (আজ) শনিবার সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন। তিনি, বলেন অধ্যক্ষকে পেটানোর সব ধরনের প্রমান তার কাছে আছে। এমপি ফারুক চৌধুরি যে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটিয়েছেন তার সব প্রমাণ সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হবে। এছাড়াও এমপি ফারুক চৌধুরীকে ফ্রিডম পার্টির নেতা বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।
আসাদের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি ঘোষণা দেয়ার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মাঠ। এই দুই শীর্ষ নেতাকে নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। অনেকেই বলছেন এটা কাদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষ করে এই দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা দ্বন্দ্বের বহিপ্রকাশ। মাঝখানে কিছু দিন বিরতি থাকার পর এখন পুনরায় তাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী সভাপতি ও আসাদুজ্জামান আসাদ সাধারণ সম্পাদকব নির্বাচিত হন। এ কমিটি গঠনের পর এক বছর সভাপতি সম্পদকের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। এরপর থেকে এমপি ফারুক চৌধুরী ও আসাদুজ্জামান আসাদ দুই মেরুতে অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে শুরু হয় অন্তদ্বন্দ্ব কলহ। সময় গড়ানোর সাথে সাথে পরিস্থিতি এমনটাই হয় সভাপতি সম্পাদক একে অপরের মুখ পর্যন্ত দেখতেন না।
স্থানীয় বা জাতীয় অথবা দলীয় অনুষ্ঠানেও দুজন এক সাথে উপস্থিত থাকতেন না। ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের দুজনকে এক করার চেষ্টা করেন। দুজনকে এক টেবিলে বসিয়ে সমঝোতাও করিয়ে দেন। কিন্তু এই সমঝোতা খুব বেশি দিন টেকেনি। অল্প সময়ের মধ্যে দুজন পুনরায় দুই মেরুতে চলে যান। টানা ৫বছর পর ২০১৯ সালে ৮ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে এমপি ফারুক চৌধুরী ও আসাদ দুজনই সভাপতি পদপ্রত্যাশি ছিলেন। কিন্তু দ্বন্দ্বের কারণে তাদের দুজনকেই বাদ দেয়া হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি করা হয়
মিরাজ উদ্দীন মোল্লাকে ও সাধারণ সম্পাদক হন দুর্গাপুর-পুঠিয়া আসনের সাবেক এমপি কাজি আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এরপর ওমর ফারুক চৌধুরী ও আসাদ রাজনৈতিক মাঠ থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ে যান। আসাদ নিজের মত করে দলীয় কার্যক্রম চালাতে থাকেন।
এমপি ফারুক চৌধুরীও তার আসন নিয়েই ব্যস্ত হয়ে যান। তাদের মধ্যে চলা চন্দ্ব অনেকটাই ধামা চাপা পড়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই এমপি ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী উপজেলার একটি কলেজের অধ্যক্ষকে মারপিটের অভিযোগ উঠায় তাদের মধ্যে আবারো দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। ত
বে এমপি ফারুক চৌধুরী ও আসাদের এ দ্বন্দ্বের বিষয়ে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই কোনো মন্তব্য করছেন না। তারা শুধু বলছেন, যারা দ্বন্দ্ব করছেন তারা দুজনই সিনিয়র আওয়ামী লীগের নেতা।
তাদের বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কারণ তারা দলের জুনিয়রদের দিক নির্দেশনা দেয়ার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন যা কারোরই কাম্য নয়।