চুয়াডাঙ্গায় টানা ১৫ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার (১৬ এপ্রিল) বিকাল তিনটায় ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র রোদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে।
বিশেষ করে দুপুরের পর আগুনঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। প্রশাসন থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তীব্র গরমে বাইরে বের না হওয়ার জন্য।
চুৃয়াডাঙ্গা হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, এপ্রিলের শুরু থেকেই চুৃয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। ২ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে প্রতিদিনই এ জেলার তাপমাত্রা বেড়েছে। ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ এপ্রিল চুৃয়াডাঙ্গায় ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ এপ্রিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ এপ্রিল ৪১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৪ এপ্রিল ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গতকাল ১৫ এপ্রিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিনও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়।
প্রতিদিনই হচ্ছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড। বেড়ে চলছে রোগবালাই। ক্ষতির ঝুঁকিতে ধানসহ মাঠের অন্যান্য ফসল। কাজ কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অতিপ্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য সতর্ক করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে প্রচারণা।
আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, সহজে দেখা মিলছে না বৃষ্টির। এবারের গরমে ভিন্নমাত্রা রয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই তাপদাহের মধ্যে ঠোঁট শুকিয়ে ও ফেটে যাচ্ছে। বাতাসের জলীয়বাষ্প কম থাকায় মূলত এমন হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। যার ফলে কৃষিতে প্রভাব পড়ছে। ধানের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আবুল হোসেন জানান, তীব্র গরমে হার্টের রোগীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন। বাড়ছে হিট-স্ট্রোকের ঝুঁকি। চিকিৎসা নিতে আসা এসব রোগীদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে বলা হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান, খাওয়ার স্যালাইন, লেবুর শরবত ও তরলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া এবং রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলার আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও পরের বছর ২০১৫ সালে তা বেশ নেমে যায়। ওই বছরের ২২ মে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি। ২০১৬ সালে ১১ ও ২২ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ২০১৮ সালের ১৮ জুন ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি, ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ২০২২ সালের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, রোববার বিকাল তিনটায় চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তিনি আরও বলেন, টানা ১৫ দিন ধরে এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। আর তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে একটানা ১২ দিন ধরে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামিম ভূঁইয়া বলেন, অতি তীব্র তাপপ্রবাহে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাসা থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।