টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতি রোধ- গতিশীল উন্নয়ন ও অর্থনীতি

রাজধানী টাইমসের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

পুরনো বছরের ঝঞ্জাল, নানান সংকট, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি সব পিছনে ফেলে নতুন স্বপ্ন, নতুন সম্ভাবনা , নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নতুন বছরের যাত্রা শুরু হলো। এই নতুন বছর আমাদের জন্য নতুন প্রাপ্তি নিয়ে আসবে সেই প্রত্যাশা আমাদের। নতুন বছরের নতুন প্রত্যাশা পুরনে চাই নতুন এবং কার্যকর পরিকল্পনা। যে কোন দেশের উন্নয়ন, উন্নতি এবং অগ্রগতির প্রধান প্রতিবন্ধক ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট ও বিদেশে টাকা পাচার। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম নয়।

ঘুষ, দুর্নীতি যে কান অপরাধের অন্যতম কারণ। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট এবং টাকা পাচারের কারণে আজ সামাজিক নিরাপত্তা আজ হুমকীর মুখে। টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতির কারণে প্রায় প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রচলিত-অপ্রচলিত সকল প্রকার পণ্যের মূল্য। মানুষের জীবনে নেমে এসেছে হাহাকার। অকল্পনীয় ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিশোর গ্যাং এর মতো কিশোর অপরাধ, মাদক কারবার, মাদকাসক্তদের পরিমাণ, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, আত্মহত্যা, পারিবারিক ভাঙ্গন, নির্যাতন, শিশু শ্রম ইত্যাদি। দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে।

গত ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা। একই সময়ে দেশে কালোটাকার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৯ লাখ কোটি টাকা ওপরে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। সে হিসাবে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে পাচার হয়েছে চার লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারে যে তথ্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রকাশ করছে, সেটাও আংশিক। বাস্তবে পরিমাণ আরো অনেক বেশি। অনেক বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করেন। তাঁরা আয়ের বড় একটা অংশ অবৈধভাবে বিদেশে পাঠান। এটাও অর্থপাচার। এই তথ্য কিন্তু বৈশ্বিক সংস্থাগুলো উল্লেখ করে না। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের বৈষম্য বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

এসব পালটাতে হবে, ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। দেশ থেকে অর্থপাচার যেন থামছেই না। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অঙ্ক শুধু বেড়েই চলছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলেছিল, বিদেশে টাকা পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। এর পিছনে প্রধান কারণ ঘুষ ও দুর্নীতি বলে মনে করছেন দেশের আপামর জনসাধারণ। অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। অর্থ পাচার শুধু দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি করে না বরং দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশে অর্থ পাচার যে অন্যতম প্রতিবন্ধক তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে তেমন সন্দেহের অবকাশ নেই। সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২৭ বছরে কালোটাকার গড় হার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপির পরিমাণ ছিল স্থির মূল্যে ৩০ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। গড় কালোটাকা ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ হলে, টাকার অঙ্কে তা ১০ লাখ ৫ হাজার ৯৯৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে দেশের কালো টাকার পরিমাণ দেড় বছরের বেশি বাজেটের সমান।ঘুষ-দুর্নীতি সমাজের নৈতিকতার ভিত্তি ও মানুষের মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করে দেয়।

দুর্নীতিবাজেরা অবৈধভাবে অন্যের অর্থবিত্ত আত্মসাৎ, লুটপাট ও জবরদখল করতে সচেষ্ট হয়। তারা অবৈধ সম্পদের ক্ষমতার দাপটে মানবতাবিধ্বংসী ও নৈতিকতাবিবর্জিত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, সুদ, ঘুষসহ সামাজিক অনাচারমূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়। ঘুষ লেনদেন দুর্নীতির প্রধান উৎস।

বিজ্ঞাপন

এদেশে ঘুষ-দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা সংস্থা, পাসপোর্ট, বিআরটিএ, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পুলিশ স্টেশন, আদালত পাড়াসহ সবখানেই অনেকটা রাখঢাক না রেখেই ঘুষ গ্রহণ চলছে। ঘুষ দেয়া বা নেয়া বর্তমান সমাজে এক অনিবার্য বিধান যেন। ঘুষহীনতা মানেই এখন অস্বাভাবিক কিছু। ঘুষহীন অবস্থাটা সেবা না পাবার আশংকা তৈরি করে। ঘুষ যোগ্যতাকে শক্ত করে সব কাজের রসদ তৈরি করে। বর্তমানে গ্রহীতা ঘুষ গ্রহণে আত্মতৃপ্তি পায় কেবল তা নয়; যে ঘুষ দেয় সেও যেন এক পরম শান্তি পাচ্ছে। কারণ, ঘুষ দিতে পারা মানেই কাজটে ভালোয় ভালোয় হয়ে গেল কিংবা চাকরিটা মিলে গেল।

সেবা খাতে ঘুষ বেড়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন হয়। দ্রুত পণ্য খালাস করতে পদে পদে ব্যবসায়ীদের ঘুষ দিতে হয়। অপর প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক গড়ে ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় আমদানিকারককে। দুর্নীতি উন্নয়নের বড় বাধা। দেশের আপামর জনসাধারণ যতদিন না পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে মিছিলে যাওয়া এবং ভোট দেওয়া থেকে বিরত না হবে ততোদিন পর্যন্ত টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয়।

দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা খাতে গত বছর দুর্নীতির শিকার হয়েছে প্রায় ৭১ শতাংশ খানা বা পরিবার। ঘুষের শক্তি অনেক! এটাই এখন স্বাভাবিক। ঘুষহীন দিন অস্বাভাবিক হয়ে গেছে এদেশে।আমাদের সম্পদের অভাব নেই আছে সঠিক পরিকল্পনার অভাব আর সেই সাথে আছে অকল্পনীয় টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট। আমরা দিন দিন তাদের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়ছি। কিন্তু না আমরা চাই টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ।

২০২৩সাল থেকেই শুরু হউক টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতি রোধ উন্নয়ন ও গতিশীল অর্থনীতি। যে কোন মুল্যে আমাদেরকে টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতি রোধ করতে হবে। আর এটা করতে পারলে আমাদের জয়যাত্রা সহজ হবে।

মানুষের মধ্যে বৈষম্য কমবে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসবে, ডলালের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বাড়বে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সমাজিক আন্দোলন, জনসচেতনা, দেশপ্রেমের জাগরন, আইনের সঠিক প্রয়োগ, উপযুক্ত শাস্তি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চত করা এবং টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকার,রাষ্ট্র, আইন প্রয়োগাকারী সংস্থার পাশাপাশি আইনজীবীদেরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে দেশ ও জনগণের স্বার্থে।

আইনজীবীদেরকে টাকা পাচারকারী, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আদালতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মানুষের মধ্যে লজ্জাবোধ এবং দেশপ্রেমবোধ দুটোকেই জাগ্রত করতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে এবং সাথে সরকারি-বেসরকারি-স্বায়িত্বশাসিত সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সামাজিক দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্র এবং জাতির উন্নয়ন ও উন্নতিতে করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি যেই কাজটি করা যায় সরকারি-বেসরকারি-স্বায়িত্বশাসিত সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার এবং টাকা পাচারকারী, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের জন্য তিরষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পুরষ্কার এবং তিরষ্কারকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। পুরষ্কার এবং তিরষ্কারকের ছবি সামাজিক যোগাযোগের সকল মাধ্যমসহ সকল প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। দেশের মানুষ টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত দেশে মানবিক মূল্যবোধের চেতনায় বেড়ে উঠবে, বেচেঁ থাকবে। যা আমাদের সকল সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। সবশেষে এইটুকু আশা বলি আমাদের দেশ হউক টাকা পাচার, ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। এগিয়ে যাক সামনের দিকে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সম্মান অক্ষুন্ন রেখে।

 

সুধীর বরণ মাঝি, শিক্ষক
হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল rajdhanitimes24.com এ লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয়- মতামত, সাহিত্য, ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার ছবিসহ লেখাটি পাঠিয়ে দিন rajdhanitimes24@gmail.com  এই ঠিকানায়।

শীর্ষ সংবাদ:
ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বৃষ্টির জন্য সালাতুল ‘ইসতিসকার’ নামাজ ও বি‌শেষ দোয়া বাণিজ্যিকভাবে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠাল চাষে ভাগ্য খুলেছে সবুজের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বৃত্তে আটকা ভোলার জনজীবন! একদিনের ব্যবধানে আবারও কমলো সোনার দাম মোবাইলে ডাটার মেয়াদ চায় না ৯৮ শতাংশ মানুষ এফডিসিতে মারামারি, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত গাজীপুরে বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতিকার নামাজ আদায় লালমোহনে আবাসনের ঘর জবরদখলের অভিযোগ রাজশাহীতে পদ্মায় গোসলে নেমে তিন শিশুর মৃত্যু বাগেরহাটে দোকান ঘর ভেঙ্গে খাদে পরিবহন, নিহত ১ নবীনগরে চলে না ১ টাকা ও ২ টাকার কয়েন! উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৬ প্রার্থী ড্রামের ভোজ্যতেল ব্যবহারের প্রতিবাদে বাগেরহাটে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কলাপাড়ায় গ্রামে গ্রামে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব সিলেটে গরমে বেড়েছে জ্বর, ডারিয়া ও হিটস্ট্রোক তীব্র তাপদাহে পুড়ছে সাতক্ষীরা জবি রঙ্গভূমির সভাপতি ইব্রাহিম, সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক নিয়ামতপুরে সিলিং ফ্যানে ঝুলছিল কলেজ ছাত্রীর মরদেহ কালীগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় ও ট্রেনে কাটা পড়ে ২ জনের মৃত্যু