গো-খাদ্যের দাম বেশির কারণে গরু-ছাগল লালন-পালনে খরচ বেশি পড়ায় বিক্রিত দাম ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তা ও সংশয়ে আছেন রাজধানীর অতি কাছের মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিবারিকভাবে পশু পালনকারীসহ খামারিরা।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে গবাদিপশু সমৃদ্ধ এ অঞ্চলে প্রায় ২৫ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন ছোট বড় খামারিরা।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় তালিকাভূক্ত ৩শত ৭৪ জন বানিজ্যিক খামারি, প্রান্তিক কৃষক ও মওসুমী ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১১‘শ খামারে গরু-ছাগল পালন করা হচ্ছে।
বানিজ্যিক খামারে ১৬ হাজার ৭শত গরু-ছাগল মোটাতাজা করছেন। এর মধ্যে গরু ৯ হাজার ৫’শত, মহিষ ২৫ টি, ছাগল ৭ হাজার ৮২টি ও ভেড়া ৯৩টি।
এছাড়াও প্রান্তিক কৃষক ও মওসুমী বেপারী পর্যায়ের সব মিলে প্রায় ২৫ হাজারের অধিক পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ গরুই দেশি জাতের। এ ছাড়া শংকর জাত যেমন- রেড চিটাগাং, ক্যাটেল শাহিয়াল, ফ্রিজিয়ান ও জার্সি মিলিয়ে রয়েছে ২০ ভাগ।
এবছর ভারতীয় গরু কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ভাল দাম পাবার আশা করলেও চলমান গো-খাদ্য মূলের উর্ধ্বগতির কারণে পশু পালনকারীরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
সরেজমিন ঘুরে ও খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সব ধরনের ভুসি, চিটাগুড়, ভুট্টাভাঙা, ফিড, খুদ, খৈলসহ সবুজ ঘাসের দাম বেড়েছে।
গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলায় দুধ উৎপাদন ও পশু মোটাতাজাকরণে ব্যয় বেড়েছে খামারিদের।
ঈদ যতই এগিয়ে আসছে গো-খাদ্যের দাম ততই বাড়ছে। এতে খামারিদের খরচও বাড়ছে। ফলে গবাদি পশু পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে খামারিদের। খামারি ছাড়াও কৃষকেরা বাড়তি আয়ের জন্য অধিকাংশ বাড়িতেই গরু-ছাগল লালনপালন করে থাকেন।
কিছু দিন আগেও যে গমের ভুসি ১ হাজার ৮৫০ টাকা ছিল তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪’শত টাকায়। খৈল ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩’শত টাকা।
এ ছাড়া দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে চিটাগুড়, ভুট্টাভাঙা, ফিড, খুদ, খৈলসহ সবুজ ঘাস। সকল খাদ্যেই কেজি প্রতি প্রায় ১০-১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
খামারিরা জানান, গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিমাণ মতো খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে গবাদিপশুর খাবার কমিয়ে দিয়েছেন।
এতদিন ভালো চললেও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন তারা। এজন্য সরকারের কাছে সহযোগীতাও চান তারা। অন্যথায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ এলাকার অধিকাংশ গবাদিপশুর খামার।
হাটবাজারের তথ্যানুযায়ী , সিংগাইর উপজেলায় স্থায়ীভাবে ৫ টি হাটে গবাদি পশু বেচাকেনা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দূর-দুরান্ত থেকেও ক্রেতারা এ উপজেলায় এসে স্থানীয় হাট-বাজার ছাড়াও খামার থেকে গরু ক্রয় করে নিয়ে যান। উপজেলার হাটগুলোর মধ্যে বায়রা, সিংগাইর, জয়মন্টপ, সিরাজপুর ও মানিকনগর হাট উল্লেখযোগ্য।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহাম্মদ বলেন, আমি যতটুকু জানি এ এলাকায় গবাদিপশুর গুনগত মান ভালো। কৃত্রিম উপায়ে না করে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হয়।
বাজারে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় অধিকাংশ খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। এতে যারা গরু, ছাগল মোটাতাজা করেছেন তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এজন্য গবাদিপশু পালনকারী ও খামারিদের দানাদার খাবারের উপর চাপ কমিয়ে ঘাস উৎপাদনের দিকে মনোযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আর টাইমস/ এসএইচ