১৯৮৮ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মিজানুর রহমান। খুব শখ ছিল ঘুড়ি উড়ানোর।সে সময় পঞ্চম শ্রেণীতে থাকাকালীন একদিন সকালে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন মিজানুর। হঠাৎ বিদ্যুতের তারে আটকে যায় তার শখের ঘুড়িটি। ঘুরিটি বৈদ্যুতিক খুঁটি বেয়ে নামাতে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আটকে পড়েন বিদ্যুতের তারে। পরে চিকিৎসায় জীবন বেঁচে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে কেটে ফেলতে হয় তার বাম হাত ও বাম পা। তারপর দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থেকে সুস্থ হন। তবে শখের ঘুড়িই তাঁর দুটি অঙ্গহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বলছি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার ফকিরের ছেলে মিজানুর রহমানের কথা। তাঁর বয়স এখন ৫৩ বছর। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে তিনি বাস করছেন খানমরিচ ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামে।
রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা ঝুপড়ি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের বসবাস। দারিদ্র্যের মধ্যে কাটছে মিজানুর রহমানের জীবন। সরকারিভাবে পান প্রতিবন্ধী ভাতা। চার ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, বাকিরা এখনো সবাই ছোট। সহায়-সম্বলহীন অসহায় প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান অবশেষে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।
গত বুধবার (১৫ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে তুলে দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামাকাপড় উপহার দেন তিনি।
খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান মিঠু বলেন, ধান ও শস্যের মৌসুমে ঘোড়ার গাড়িতে কৃষিপণ্য পরিবহন করে সংসার চালান প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। বেঁচে থাকার তাগিদে এক হাত আর এক পা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে তাঁর জীবন-সংগ্রাম। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে এখন থেকে শান্তিতে বসবাস করবে মিজানুর এমনটাই প্রত্যাশা তার।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান রাজধানী টাইমস কে বলেন, ভাঙ্গুড়া উপজেলার মাদারবাড়ীয়ার আলোচিত মিজানুর রহমানের কথা শুনার পর একাধিকবার সরাসরি দেখা ও কথা বলেছি। ভাঙ্গুড়ায় ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর তার খোঁজ খবর নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয় মিজানুরকে।
ইউএনও মোহাম্মদ নাহিদ হাসান আরো বলেন, অপেক্ষার অবসান হচ্ছে মিজানুর-ফাতেমা দম্পতির। আগামীকাল বুধবার (২২ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে ৪র্থ পর্যায়ে ভূমিহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪র্থ পর্যায়ে ভূমিহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। আর রাস্তায় ডেরা পেতে থাকতে হবেনা মিজানুর ও তাঁর পরিবারকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারই এই সব অসহায় মানুষের জীবনের বড় অনুপ্রেরনা। জরাজীর্ণ জীবন থেকে একটি ছিমছাম ও সাজানো জীবন ফিরে পাবে। প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন যাচাই-বাছাই কার্যক্রমসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পসমূহের সার্বিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকল্পে মাননীয় সংসদ সদস্য ও ভুমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মকবুল হোসেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ভাইস চেয়ারম্যানগন, ইউপি চেয়ারম্যানগণসহ সকল জনপ্রতিনিধি নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সুধীজনসহ সকলে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় ভাঙ্গুড়া উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষিত হবার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এ ঐতিহাসিক স্বপ্নপূরণে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার জন্য উপজেলা প্রশাসন সকলের প্রতি চির কৃতজ্ঞ বলেও জানান তিনি।