সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর (রাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি যখন ক্ষমতায় তখনও আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে, শিক্ষকের ওপর হামলা হচ্ছে। আমরা এখানে আবেদন-নিবেদন করছি, কিন্তু কোন কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
বিচার শুধু হলে হবে না আমাদের দেখাতে হবে কোথায় বিচার হচ্ছে।
১০ বছর ধরে, ১৫ বছর ধরে যে বিচার হয় সে বিচার, বিচার নয়, অবিচার। আমরা এই অবিচার চাই না। আমাদেরকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে এসব সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড রুখতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় এর প্যারিস রোডে নড়াইলসহ সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এর সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
কর্মসূচিতে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানানো হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করো’, ‘আজ আমার ঘর পুড়ছে, কাল আপনার নয়তো’, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা কোথায়?’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায়।
মানববন্ধনে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মনু মোহন বাপ্পা বলেন, সম্প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন। তারা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সেই সাথে এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন—রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে ইডেনছাত্রী সালমার মৃত্যু
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ব্যক্তির বিষয়কে কেন্দ্র করে যখন সমষ্টির উপর দোষারোপ করে হামলা চালানো হয় তখন সেটি কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনা উচিত। না হলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকবে। যারা এ ধরণের ঘটনা ঘটায় তাদেরকে সমাজচ্যুত করা দরকার। পারস্পারিক মিলে মিশে মহানবীর মদিনা রাষ্ট্র যেমন ছিল সেইভাবে যেন তারা এখানে নিরাপত্তার সাথে থাকতে পারে। একজন মুসলমান হিসাবে আমি কোন ভাবেই মনে করি না সনতন ধার্মাবালম্বীদের উপর এ আঘাত করা ইসলাম অনুমোদন করে। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছিল সেগুলোর অতিসত্তর বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় এর সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বর্তমান সরকার যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, রাষ্ট্রের উন্নয়ন করছেন কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য যে সকল পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটি করছেন না। আমাদের প্রতি তাদের কোন নৈতিক দায়িত্ব নেই। পুলিশ প্রশাসন রাষ্ট্রীয় আদেশ ছাড়া স্বতঃস্ফুর্তভাবে কোন কাজ করে না। নড়াইলে যখন হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তারা চলে যায় ঠিক তার পরক্ষণই পুলিশ এসে চারিদিক ঘেরাও করে রাখে। আপনারা মন্দিরে কোরআন শরীফ রেখে আসলেন কিন্তু সে তো সেটা করেনি। তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়েছে বিষয়টি আপনারা জেনেও আপনারা এটা করলেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় এর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অমিত কুমার দত্তের সঞ্চালনায় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবু বকর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় বিভিন্ন বিভাগের অর্ধ-শতাধিক শিক্ষক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আর টাইমস/আছমা