মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ৫৬% শিক্ষার্থী জানে না সংবিধান কি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on pinterest
Share on print

এদেশের শিক্ষার্থীরা সংবিধান সম্পর্কে কতটুকু জানে?বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ সম্পর্কে একটি গবেষণা করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষক মো. মনির আলম

আধুনিক মানব সভ্যতার অন্যতম অবদান সাংবিধানিকতা।সমসাময়িক বিশ্বে প্রায় সব দেশেই সংবিধান রয়েছে।এটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের আইনগত ভিত্তি বা রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল।একটি জাতির আইনগত, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকারগুলো এই দলিলে লিপিবদ্ধ করা হয় যা ঐ দেশের আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করে। অধিকাংশ সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত থাকে।এ কারণে সংবিধানকে বলা হয় একটি দেশের আয়না।



গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান । মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়।সংবিধান প্রণয়ের উদ্দেশ্য গঠিত গণপরিষদের সংবিধান প্রণয়ন কমিটি ৭৪ টি বৈঠকে মিলিত হয়ে ৩০০ ঘন্টা সময় ব্যয় করে সংবিধান রচনা করেছিলো যা সময় হিসেবে লেগেছিল ৯ মাস।

বিজ্ঞাপন

সংসদ বা অথরিটি তথা সরকার যে আইন করবে, তা জনগণের জানা থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী চলার দায়িত্ব জনতার। এবং সে আইনটা যদি হয় সংবিধান, তাহলে তো শিক্ষিত থেকে শুরু করে সাধারণ জনতা সবারই জানার কথা । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সাধারণ জনগণ তো দূরের কথা আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজ তথা ছাত্ররাও সংবিধান সম্পর্কে জানেনা।বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে তারা কতটুকু জানে,আদৌ সংবিধান চোখে দেখেছে কিনা বা সংবিধান দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইব্রেরিতে অন্যান্য রেফারেন্স বইয়ের সাথে সংগ্রহে আছে কিনা প্রভৃতি বিষয়ে জানার জন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন এ সম্পর্কে গবেষণাটি করা হয়।

গবেষণায় ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৭২ টি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার মোট ১০২৭৯ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।গবেষণায় দেখা যায় নিম্ন মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর লেবেলের ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ই জানেনা সংবিধান কি। তার মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক লেবেলে ৭৩%, উচ্চ মাধ্যমিক লেবেলে ৩৭%, দাখিল লেবেলে ৮৮% এবং আলিম লেবেলে ৬২%। তবে স্নাতক লেবেলে না জানার সংখ্যা কিছুটা কম যা শতকরা হিসেবে ১৯ ভাগ। ছাত্র ছাত্রীদের প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে যে একটি সংবিধান আছে তা আপনারা জানেন কিনা? উত্তরে মোট ছাত্র ছাত্রীর ২৭ শতাংশই না বোধক উত্তর দিয়েছেন। এদের মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক যথাক্রমে ৪৮% এবং ৩৩%, দাখিল এবং আলিম যথাক্রমে ৬১% এবং ৩৮%। স্নাতকে মাত্র ৩ শতাংশ না বোধক উত্তর দিয়েছেন।




বিজ্ঞাপন

প্রশ্নমালায় একটি প্রশ্ন ছিলো,আপনারা কি সংবিধান দেখেছেন? মাত্র ১৬ শতাংশের বেশি কিছু ছাত্র ছাত্রী বলেছেন তারা সংবিধান দেখেছেন।কিন্তু যখনই তাদের সংবিধানের কভার পেজের রং লিখতে বলা হলো তখন তা ১১ শতাংশে নেমে আসে। অনেক ছাত্র ছাত্রী বিসিএস বা চাকরির পরীক্ষায় সংবিধান বিষয়ক প্রশ্ন আসায় সংবিধান সম্পর্কে কিছুটা ওয়াকিবহাল। এদের আবার অধিকাংশই পকেট সংবিধান ব্যবহার করেন। সে হিসেবে সংবিধান দেখেছেন এমন নিম্ন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের হার যথাক্রমে ১.২০% ও ১.৮৮%, দাখিল এবং আলিম লেবেলে হার যথাক্রমে ০.৬% ও ০.৯৭%। স্নাতক লেবেলে মাত্র ৩৪% শিক্ষার্থী সংবিধান দেখেছেন। কৌতুলভাবে জানতে চেয়েছিলাম কারো বাসায় কোন সংবিধানের কপি আছে কিনা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংবিধান দিবস পালন বা এই বিষয়ে কোন ওয়ার্কশপ সেমিনার হয় কিনা। উত্তরে ১০০% ছাত্র ছাত্রীই না বোধক উত্তর দিয়েছেন।এর পাশাপাশি স্নাতক লেবেলের ছাত্র ছাত্রীদের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার সহ সংবিধান থেকে কিছু মৌলিক প্রশ্ন করা হয় যার ৩৬% ই তারা জানেনা।

জেলার ১৭২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, লাইব্রেরিয়ানের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছি তাদের প্রতিষ্ঠানে কোন সংবিধানের কপি আছে কিনা। নিম্ন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক লেবেলের ১০৭ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৪ টি প্রতিষ্ঠানে (বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এবং নটরডেম কলেজ ময়মনসিংহে অরিজিনাল কপি) সংবিধানের কপি পাওয়া গেছে যা শতকরা হিসেবে মাত্র ৩.৭৪%।দাখিল আলিম মাদ্রাসা লেবেলের ৩০ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১ টি প্রতিষ্ঠান সংবিধান আছে মর্মে আশ্বস্ত করেছেন যা শতকরা হিসেবে মাত্র ৩.৩৩%।কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় লেবেলের ৩৫ টি প্রতিষ্ঠানের মাত্র ৯ টি প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিতে সংবিধানের কপি দেখা গেছে।



গত বছর সংবিধানের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে।অথচ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে সংবিধানকে ছাত্রদের মাঝেও সেভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়নি।আশ্চর্যের বিষয় হলো ময়মনসিংহ জেলার প্রায় ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সংবিধানই দেখেনি! স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ৯২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংবিধান ই নেই।আমরা যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্য সংগ্রহে যায়, তখন শিক্ষক- শিক্ষিকারা বলেছেন তারা নিজেরাই সংবিধান দেখেননি এবং কৌতূহলবশত তারা গবেষকের কাছ থেকে সংবিধান দেখতে চেয়েছেন।

মোঃ মনির আলম
প্রভাষক
আইন ও বিচার বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শীর্ষ সংবাদ:
‘এক মাসে বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার’ বিএনপি একটি অগণতান্ত্রিক তাই তারা নির্বাচনে আসেনা: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আওয়ামী লীগের চিন্তা-চেতনা শুধুই মানুষের উন্নয়নের: মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় ডিবি পুলিশের দুই সদস্য আহত , আটক ৩ আমার কর্মীদের উপর হামলা হলে আমরা ঘড়ে বসে থাকবো না উচিত জাবাব দিব: এমপি সীমা চাকরি পেলেন শ্রমিক আন্দোলনে নিহত জালালের স্ত্রী নৌকার টিকিটে লড়বেন যেসব নারী কোন স্বতন্ত্র মতন্ত্র আমরা চিনি না, মাইরের ওপর কোন ওষধ নাই: ছাত্রলীগ নেতা রিমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও স্বাভাবিক ভাবে চলছে পরীক্ষা ও ক্লাস কালাইয়ে ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে দুই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র সাতক্ষীরায় সরসকাটি দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগে বাণিজ্যের টাকা সভাপতির পকেটে গাজীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন এমপি সবুজ গাজীপুরে বাসে আগুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে এমপি পদ ছাড়তে হবে না: ইসি রাজশাহীতে ককটেল হামলায় দুইজন আহত, তিনজন আটক রাজশাহীর আদালত চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণ, পরিচ্ছন্নকর্মী আহত জয়পুরহাট পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ায় আসামী গ্রেফতার মোংলায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে অবস্থানে কর্মসূচি মাটিরাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গ্রেফতার ডিবি কার্যালয়ে শামীম ওসমান