গত ১৯ জুন রবিবার থেকে ফেরির নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ফেরিতে প্রতিটি যানবাহন পারাপারে ২০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যাতায়াতকারী অধিকাংশ যানবাহনের চালকদের মাঝে বাড়তি ফেরির ভাড়া নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরজমিনে ঘাট এলাকায় গিয়ে একাধিক চালকদের সাথে ফেরিতে বাড়তি ভাড়া নিয়ে কথা হয় প্রতিবেদকের সাথে।
বরিশাল থেকে ভাঙ্গারী বোঝাই করে ঘাটে আসা ঢাকাগামী ট্রাকচালক মো. কাউছার মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ ফেরি ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করাতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এমনিতেই গাড়ির ভাড়া কম, খরচ হয়ে যায় বেশী।
তাছাড়াও ঘাটে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা,দিনের পর দিন নদী পারের জন্য সিরিয়ালে আটকে থাকেত হয়। এতে করে খাওয়া খরচ আরো বেড়ে যায়। ফেরি ভাড়া কম হলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আগে ফেরি পারের জন্য যে টিকিট নিতো ৯৬০ টাকা এখন সেটা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১২শ টাকার মতো। এছাড়াও তো আরো কত খরচ আছে।
বেনাপোল থেকে আসা খোকন নামে এক ট্রাকচালক দুংখ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে আমাদের হয়েছে “আয় কম, খরচ বেশী”। একটি ট্রাকে আর কত টাকা ইনকাম হয়। আমি এই ট্রাকের নিজেই মালিক। নিজের গাড়ি নিজেই চালাই। যেভাবে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ আছি, তারা না পারছি মড়তে না পারছি বাঁচতে। তবে সরকারের এই মুহুর্তে ফেরি ভাড়া বাড়ানো উচিত হয়নি। আমাদের এমনিতেই ঘাটে এসে নদী পারের জন্য আটকে থাকতে হয়। তারপর আবার ২০% বাড়তি ভাড়া। এ যেন মরার ওপর খরার ঘাঁ।
যশোর থেকে ডাউল বোঝাই করে ঘাটে আসা ট্রাক চালক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ফেরি ভাড়ার বাড়ানোর বিপক্ষে।কেননা যশোর থেকে একটি ট্রিপ ঢাকা নিয়ে গেলে আমরা ১৭-১৮ হাজার টাকা ভাড়া পাই। পথে নানান খরচ।তারপর আবার ডিজেলের দাম বেশী। মালিক পক্ষ যদি একটি ট্রাকের পেছনে ৪০-৫০ লক্ষ্য টাকা খরচ করে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা না পায় তাহলে মালিক ই বাঁচবে কিভাবে আর আমরা বাঁচবো কিভাবে? ২০ শতাংশ ফেরি ভাড়া বাড়ানোর জন্য আমাদের যাওয়া আসা বাবদ প্রায় ১ হাজার টাকা বাড়তি লাগবে। কি আর করবো সরকার যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই মেনে নিতে হবে। আমরা গরিব মানুষ। কিছুই বলার নাই।
যাত্রীবাহী পরিবহনের চালক ফজলুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের প্রায়ই ঘাটে এসে যানজটে পড়ে থাকতে হয়। ফলে খরচের বাড়তি টাকা এখানে লেগে যায়। তারপর আবার বাড়ানো হয়েছে ফেরি ভাড়া। আমরা আছি নানান যন্ত্রনায়। বর্তমানে বাসে যাত্রীও কম। এতো খরচ হলে মালিকপক্ষ বাস চালাতে হিমশিম খাবে।
জুয়েল হাওলাদার নামে এক যাত্রী বলেন, ফেরির ভাড়া বাড়নো ঠিক হয়নি। এতে আমাদের আগামীতে চলাচল নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কারণ, পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিবে দ্বিগুণ। এদিকেও সড়ক বিভাগের লক্ষ্য রাখতে হবে। যাতে পূর্বের ভাড়ার চেয়ে আকাশচুম্বী যেন না হয়।’
(বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন বলেন, ফেরিতে পারাপার হওয়া প্রতিটি যানবাহনের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ভাড়া বাড়িছে কতৃপক্ষ। এটা সরকারি নীতিমালা। আমাদের কিছু করার নেই। তবে ফেরি ভাড়ার বৃদ্ধির জন্য ঘাটে কোন প্রভাব পড়েনি। কেও কোন অভিযোগও করেনি। ঘাট দিয়ে স্বাভাবিক সময়ের মতই যানবাহন নদী পারাপার হচ্ছে।