একটা দেশের অভিভাবক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে যখন যারা ক্ষমতায় থাকে। প্রতক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের সফলতা এবং ব্যর্থতার পেছনে যখন যারা নেতৃত্ব দেয় তাদের উপরই বর্তায়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য থাকে দেশের মধ্যে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা, দেশের স্বার্থে বিভিন্ন সময় প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যুগোপযোগী নানান সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সাধারন মানুষের কল্যানে কাজ করা।
দেশের উন্নয়নে যেমন নজর দিতে হবে একজন জনপ্রতিনিধির ঠিক তেমনি সার্বিক খোঁজখবর নিতে হবে নিজের নির্বাচনী এলাকার সাধারণ জনগনের। সাধারণ জনগনের আপদে-বিপদে যখন জনপ্রতিনিধিরা হাত বাড়িয়ে দেয় তখন তাদের সাহস, উৎসাহ এবং মনোবল বেড়ে যায়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে যদি লক্ষ করি অধিকাংশই দেখা যায় রাজনৈতিক দলের নেতারা অনেকটাই জনবিচ্ছিন্ন সাধারণ জনগনের থেকে। সাধারণ মানুষের বিপদে খুব বেশি হস্তক্ষেপ লক্ষ করা যায়না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। এবং যতটুকুও করে তার বৃহৎ একটা অংশ বাধ্য হয়ে। বা সহজভাবে বলে অনিচ্ছাকৃত। যেমন বিভিন্ন সময়ই দেখা যায় ত্রাণ দেওয়ার জন্য নেতা তার বাবার বয়সী কাউকে অথবা ছেলের বয়সী কাউকে চড় বসিয়ে দিচ্ছে অথবা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। মনেহয় যেন ত্রাণ দেওয়া তাদের কোন দায়িত্বই না। তাই যতক্ষণ কার্যক্রম করছে প্রতিটা সেকেন্ড বিরক্তি প্রকাশ করছে। তাদের চেহারায় একটা অনীহা ভাব কাজ করে। এসব নিয়ে বারবার হাজার হাজার মানুষ অভিযোগ করেছে। ফলস্বরূপ বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময়ে জনতার রোষের সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু কোন পরিবর্তন আসেনি এখন পর্যন্ত।
আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে তাকাই তবে লক্ষনীয়ভাবে দেখি করোনার এমন দুঃসময়ে অর্ধশতকের বেশি জনপ্রতিনিধি তাদের নির্বাচনী এলাকায় না গিয়ে ঢাকা থেকেই সকল কিছু পরিচালনা করছে। যেটা রিতীমতো দায়িত্বহীনতা এবং অমানবিকতার পরিচয় বহন করে।
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে বন্যা শেষ হতে না হতেই আবার ২য় দফায় শুরু হয়েছে বন্যা। এমন বন্যা স্থানীয় জনগণ বিগত ৩০-৪০ বছরেও দেখেনি। এমন বিপদজনক পরিস্থিতিতে সরকার সাধ্যমত সাহায্য করছে। সরকারের দেওয়া বিভিন্ন অনুদান পৌঁছে দিচ্ছে প্রসাশনের বিভিন্ন কর্মকর্তা। এছাড়াও কাজ করছে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তিরা। অথচ এমন দুঃসময়ে সার্বক্ষণিক পাশে থাকার কথা ছিল স্ব স্ব আসনের এমপি, মন্ত্রী এবং স্থানীয় নেতাকর্মী। কিন্তু তাদের দেখা পাচ্ছে না ভুক্তভোগী জনগণ। এমনকি এমন একটা দুর্যোগেও অনেক এমপি মন্ত্রী প্রবেশ করেননি নিজের নির্বাচনী এলাকায়। যেটা বারবার গণমাধ্যম এবং পত্র পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে।
একটা বিষয় খুব লক্ষনীয়ভাবে দেখি যে, যে কোন দুর্যোগে সরকার আলাদা ভাবে বরাদ্দ দেয়। এই বরাদ্দকৃত উপাদান গুলো জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের পাশে নেই। তারা ফেসবুক পোস্টে ২-৪ টা ছবি আপলোড দিয়েই নিজেদের দায়িত্বশীল ভুমিকা পালনে সীমাবদ্ধ।
বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠন যেমন নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে দিশেহারা এই মানুষের পাশে অবস্থান নিয়েছে এভাবে যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পাশে থাকতো তবে সাধারণ মানুষের কষ্টের লাগব অনেকটাই কমে যেত। কেননা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির একেকটা এলাকা যতটা পরিচিত সেটা কোন সংগঠন বা অরাজনৈতিক ব্যক্তির দ্বারা সম্ভব না। এমনকি বিভিন্ন সংগঠনকেও যদি নেতৃত্বের যায়গা থেকে দিকনির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করতো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তবে একজন মানুষকেও অভুক্ত থাকতে হতো না। প্রত্যকে ঘরে বসেই তাদের ত্রান পেয়ে যেত তাদের এই দুঃসময়ে। কেননা বিভিন্ন সংগঠনের জন্য নিরাপত্তা এবং যথাযথ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবেও অনেক সময় দুর্গম এলাকায় সাহায্য পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না।
এখন থেকেই সরকারের এমন জনপ্রতিনিধিদের চিহ্নিত করে রাখা উচিত। একজন নেতার পরিচয় তো এমনই হওয়া উচিত জনগণের কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দিবে। এবং একজন নেতাকে চেনার সবচেয়ে বড় উপায় সাধারন মানুষের বিপদে তার কতটুকু অবদান। কিন্তু তা না করে যারা শুধুই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দায়িত্ব পালন করবে তারা আর যাই করুক দেশের দুর্দিনে, সরকারের দুর্দিনে কোন কাজে আসবে না। কেননা এরা কখনো দেশকে ভালোবাসে না এবং ভালোবাসেনা দেশের মানুষকে।
এসব কারনেই আমরা যদি সরেজমিনে খোঁজখবর নেই তবে দেখবো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি মানুষের সবসময় একটা রাগ, ক্ষোভ কাজ করে। উনাদের এমন দায়িত্বহীনতার ফলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করতে পারেনা।
সুতরাং প্রতিটা রাজনৈতিক দলের উচিত তাদের নেতৃবৃন্দের প্রতি নজরদারি এবং জবাবদিহিতা তৈরি করা। এতে যেটা হবে সবাই নিজের দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে। এবং দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে উদ্ভুত হবে।
মো. সায়েদ আফ্রিদী
শিক্ষার্থী: ঢাকা কলেজ
আর টাইমস/মেহেদী