রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের জমি দখলের ঘটনাটি সমাজের সমন্বিত ব্যর্থতার উপসর্গ। আমাদের বস্তুগত উন্নয়ন হয়েছে মানবিক উন্নয়ন হয়নি। মানবিক উন্নয়ন ছাড়া সকল উন্নয়ন ব্যর্থ। অরুণ স্যারের সমস্যাটি দুই যুগ ধরে চলছে। তার সমস্যার সমাধান হয়নি কারণ তিনি শিক্ষাবিদ তার পেশি শক্তি নেই।
বুধবার (২৯) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোডে ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের জমি দখলের প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এ কর্মসূচি থেকে শিক্ষক উৎপল কুমারকে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি এবং শিক্ষক স্বপন কুমারকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদও জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন চন্দ্র দাস বলেন, নড়াইলের মির্জাপুরে শিক্ষক স্বপন কুমারের গলায় জুতার মালা পড়ানো মানে শিক্ষক সমাজকে অপমান করা। কিন্তু এমন একটি হৃদয় বিদারক ঘটনায় দেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ প্রতিবাদ জানায় নি। সমাজে ধর্মান্ধতা জেঁকে বসেছে। আমাদের নৈতিকতায় পঁচন ধরেছে, পচনটা ধীরে ধীরে বড় আকারে ধারণ করবে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, সাম্প্রদায়িক চেহারা দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর বিশেষ করে শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। যারা এই কাজ করছে তারা যে খুব ধার্মিক তা নয়। তারা এ কাজ করছে কারণ কোনো না কোনোভাবে এর সাথে সম্পদ জড়িয়ে আছে এবং সেটাকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দিচ্ছে। আমি মনে করি সংখ্যালঘু কেবল ধর্মের ব্যাপার নয়। বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশে একই অরাজকতা চলছে।
তিনি আরও বলেন, আপনি আইনের কথা বললে, নিয়মের কথা বললে, সৎতার কথা বললে আপনার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট হয়ে যাচ্ছে। যদি এখনই এর ব্যবস্থ নেওয়া না হয় তাহলে দেশে যা হবে বিশ্ববিদ্যালয়েও তা হবে। এরপর ছাত্ররাও বলতে শুরু করবে আপনি এতো পড়ান কনো? এখনই সাবধান হওয়া উচিত।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, আজ আমরা স্বপন কুমার সরকারকে জুতার মালা পরালাম কিন্তু বেশি দিন নেই হয়তো আমাদেরও এই অপমান ভোগ করতে হবে। এর আগে বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়ার কারণে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে অপমান ও জেল জরিমানা করা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, তাদের কে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
মানববন্ধনে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মনু মোহন বাপ্পার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শুভ্রা রাণী চন্দ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অমিত কুমার দত্ত, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক রনজু হাসান, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধ-শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।