অবৈধ ড্রেজারে সয়লাভ, গিলে খাচ্ছে আড়িয়াল বিলসহ কৃষি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on pinterest
Share on print

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এক শ্রেণীর অসাধু ভুমিদস্যু সেন্ডিকেট সদস্যরা অবৈধ ড্রেজার ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু ভরাটের মাধ্যমে গিলে খাচ্ছে আড়িয়াল বিলসহ উপজেলার কৃষিজমি। ড্রেজার ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে কৃষি ও সরকারী খাসজমিসহ খাল,জলাশয়,পুকুর ভরাটের ফলে আড়িয়াল বিলের পানি আসতে না পারায় বিলের মৎস্য ও শস্য ভান্ডার পুরোপুরি হুমকিতে পড়েছে এবং ছোট বড় খাল,জলাশয় ও পুকুর ভরাটে জলাবদ্ধতার সৃষ্ট হয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। কৃষি জমি ভরাট করে ভূমিদুস্যুরা গড়ে তুলেছে আবাসনের নামে অবৈধ হাউজিং প্রকল্প। এর ফলে দেশের কৃষি উৎপাদনের বিরাট একটি অংশ দেশের কৃষি খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আড়িয়াল বিল প্রমত্তা পদ্মা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদিখান, ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত অবস্থিত একটি অবভূমি। এটি দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। আড়িয়াল বিলের বেশিরভাগ এলাকাই শুষ্ক ঋতুতে আর্দ্র থাকে ও বিলে যথেষ্ট পরিমাণ পানি সঞ্চিত থাকতো। বর্ষায় পানিতে টইটুম্বুর থাকলেও শীতকালে এটি বিস্তীর্ণ শস্য ক্ষেতে পরিণত হয়। এখানে শীতকালে নানা ধরনের সবজির চাষ করা হয়, এ বিলের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে,বর্ষাকালে পানি থৈ থৈ পালতোলা নৌকা চলাচল, শীতকালে মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের অবাক সৌন্দর্য ও বিশাল আকৃতির মিষ্টিকুমড়া। এই বিলের আয়তন ১শত ৩৬ বর্গ কিলোমিটার। এখানে ২৮হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিই খাস ও ভেস্টেড প্রপারটি। এতে যে পরিমাণ কৃষি খাদ্য উৎপাদন হত তাতে পুরো দেশের প্রায় আড়াই থেকে তিন দিনের খাদ্য চাহিদার যোগান হত।

উপজেলাসহ আড়িয়াল বিল পাড়ের চুর্দিকে যে হাড়ে অবৈধ ড্রেজার ও ড্রাম ট্রাক দিয় কৃষি ও খাস জমি ভরাট হচ্ছে। এতে অল্প সময়ের ব্যবধানে আড়িয়াল বিলসহ উপজেলার বেশীরভাগ অংশের কৃষি জমিই আর থাকবে না বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।

বিজ্ঞাপন

অবৈধ ড্রেজারের পাশাপাশি বালু ভর্তি বড় বড় ড্রাম ট্রাক দিয়ে দিবারাত্রি কৃষি জমি ভরাট করা হচ্ছে সমান তালে। এই ড্রাম ট্রাক চলাচলে গ্রামীন কাচা পাকা সড়কসহ সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মহাসড়ক, আন্তঃ সড়কগুলোও পড়েছে হুমকির মুখে। নির্মাণ বা সংস্কারে বছর না পেরুতে সড়ক গুলো এবড়ো থেবড়ো হয়ে সড়কের পাশ্ব ভেঙ্গে জনচলাচলেন অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, স্বপ্নের পদ্মাসেতু ও রেলওয়ে নির্মানে এই অঞ্চলের জমির মুল্যে বেশ কয়েকগুন বেড়ে যাওয়া এখানে গড়ে উঠেছে ছোট বড় শতাধিক হাউজিং কোম্পানির অপরিকল্পিত নগরায়ন। আড়িয়াল বিলে গড়ে তুলেছে রয়েল প্রপারটিস, ধরিত্রী এবং এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ব পাশে ঠিকানা, প্রিমিয়াম ভ্যালি,কৃষ্ণচূড়া নামে পরিবেশের ছাড়পত্রহীন নামে-বে-নামে হাউজিং কোম্পানি।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশের ছাড়পত্রহীন এসব হাউজিং প্রকল্পে ছাড়পত্রহীন বহুতল বিল্ডিং উত্তোলনে নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
কৃষি প্রধান এদেশের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সাথে জড়িত। বর্তমানে কৃষি জমি ভরাট করে অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প ও নগরায়নের ফলে ক্রমশ কমছে উপজেলার এসব আবাদি জমির পরিমাণ।

অনেকেই বলে থাকেন- কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার পেছনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি দায়ী। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য আবাদি জমি অকৃষিতে পরিণত হচ্ছে। এভাবে কৃষি জমি কমতে থাকলে ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়বে।

সচেতনমহলের লোকজন মনে করেন, এভাবে যদি আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যেতে থাকে এবং কৃষি জমি অনাবাদি হয়, তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে-যা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। বিভিন্ন কোম্পানি প্রায় সারা দেশেই শত শত বিঘা জমি কিনছে। এতে কৃষকরা ভূমিচ্যুত হচ্ছে। কোম্পানিগুলো প্রথম দিকে কৃষি কাজের নাম করে কেনা জমিতে গাছপালা রোপণ বা বপন করে। পরে জমিটিতে মাটি ভরাট করে অন্য কাজে লাগায়।

বাংলাদেশ ছোট্ট একটি ভূ-খন্ড, অথচ জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখনই মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ অতি সামান্য। তারপরও যদি কৃষি জমি এমন দ্রুত হারে কমতে থাকে, তাহলে এই জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দেওয়া একসময় কষ্টকর নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে। ভূ-গর্ভের পানির স্তর অত্যাধিক নিচে নেমে যাওয়ায় এখনই অনেক জায়গায় গভীর নলকূপেও পানি ওঠেনা। খাল-বিল-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভে যেতেও পারছে না।

এ অবস্থায় ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সর্বসাধারণের সচেতনতা কৃষি জমি হারানোর সমস্যা সমাধানে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। দরকার সরকারের সঠিক পরিকল্পনা।

সরেজমিনে আড়িয়াল বিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে ভুমিদস্যুরা স্থানীয় কৃষকদের লোভ দেখিয়ে তাদের কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিশালাকৃতির স্তুপ রেখে বর্ষা মৌসুমে বড় বড় ট্রলার যোগে দেশের বিভিন্ন ইট ভাটা নিয়ে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছি এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

বাঘড়া ইউনিয়নের মাঘডাল নয়াবাড়ি এলাকায় পশ্চিম বাঘড়ার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলমের নেতৃত্বে জনচলাচলের রাস্তার উপর অবৈধ ড্রেজার স্থাপন করে পদ্মানদী থেকে সরাসরি বালু উত্তোলন করে এলাকার কৃষিজমিসহ জলাশয় ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে।

ভাগ্যকুল ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব পাশে ও ভাগ্যকুল মান্দ্রা এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মনোয়ার হোসেন শাহাদাতের পৃষ্ঠ পোষকতায় ও ইউপি সদস্য রতন শাহার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি অবৈধ ড্রেজার সড়কের উপর ও আন্তঃ সড়ক বোরিং করে বসিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কৃষি, খাসজমি,খাল ও জলাশয়, পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। এখানে বেশ কয়েকটি ড্রেজার প্রায় সাড়া বছর চলে।

রাঢ়ীখাল ইউনিয়নে তুহেল, মানু’র নেতৃত্বে একাধিক ড্রেজার মান্দ্রা ও কবুতরখোলায় পদ্মানদীতে স্থাপন করে ইউনিয়নের খাস জমিসহ কৃষি জমি ভরাট করছে বছর ভরে।

কুকুটিয়া ইউনিয়নে হাশিম আলী আমিনের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত অবৈধ ড্রেজার কৃষি জমির মাটি কেটে পূনরায় কৃষি আবাদি শত শত একর জমি ভরাটের কর্মজ্ঞ চালাচ্ছে কয়েক বছর যাবৎ।

ষোলঘর ইউনিয়নে রফিক মেম্বার, রাসেল মাদবর ও সাবেক আলী মেম্বারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি অবৈধ ড্রেজার শ্রীনগর গোয়ালী মান্দ্রা খালে স্থাপন করে ঐ ইউনিয়নের কৃষি জমিসহ খাস জমি ভরাট করা হচ্ছে।

আড়িয়াল বিল পাড়ের কৃষক মোসলেম ঢালী জানান, আড়িয়াল বিলে আমরা মাছসহ প্রচুর ফসল উৎপাদন করি। আমরা বিলের কৃষি জমিতে ফসল আবাদ করে জীবন জীবিকা চালাই। যেভাবে আমাদের এই অঞ্চলে কৃষি জমি ভরাটের হিড়িক পড়েছে তাতে কয়েক বছরের মধ্যেই আড়িয়াল বিলটাকে আমরা হারাবো। চুর্দিকে ভরাটের কারনে এখনিতো বিলে পানি আসতে পারে না। এখন বর্ষা মৌসুম বিলে আগের মত পানি নেই।

বীরমুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন মাস্টার বলেন, আমাদের প্রধানন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের ১ ইঞ্চি কৃষিজমিও ভরাট করা যাবে না। এমন কি ফসলি জমিতে অনুমতি ঝাড়া কোর বাড়ীঘর করা যাবে না। আড়িয়াল বিল দেশের বিশাল একটি সম্পদ। এখানে বিপুল পরিমান মাছ, শস্য ও ধান আবাদ হয়। এটাকে কোন ভাবে নষ্ট করা যাবে না। এই বিলকে আমাদের সকলের রক্ষণাবেক্ষন করা উচিৎ। তানাহলে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম হুমকির মুখে পড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহসিনা জাহান তোরণ বলেন, কৃষিজমি ভরাটের ব্যাপারে আমাদের সকলকেই উদ্যােগী হয়ে এটা বন্ধ করতে হবে। শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই আমাদের কৃষি জমিসহ আড়িয়াল বিলের জীব বৈচিত্র রক্ষা হবে।

উপজেলা নির্বহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ড্রেজার গুলোর সংযোগ বিছিন্ন করেছি এবং কিছু কিছু ড্রেজার মালিকদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করছি। বাকী গুলোর খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর, মুন্সীগঞ্জ উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আড়িয়াল বিলে এপর্যন্ত কোন আবাসন প্রকল্পের অনুমতি আমরা দেইনি। অন্যান্য গুলোর বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শীর্ষ সংবাদ:
নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ: ডিএম‌পি ক‌মিশনার আজ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কৃষক সমাবেশ মেক্সিকোয় গির্জার ছাদ ধসে নিহত ৭, ধ্বংসস্তূপে আটকা ৩০ খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা: ‘আইনে সুযোগ আছে’ সাতক্ষীরায় স্কুল ছাত্রী ধর্ষন মামলার প্রধান আসামী রাকিব গ্রেপ্তার জবি থেকে ট্রেজারার নিয়োগে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি শিক্ষক সমিতির ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে কৃষকের আত্মহত্যা গোমস্তাপুরে মহানন্দা নদীতে অজ্ঞাত মহিলার লাশ উদ্ধার মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে : সিইসি গাজীপুরে চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রকৌশলীর অপসারণ চেয়ে বরিশালে ঠিকাদারদের মানববন্ধন সিলেটের পালপুরে ৩ মাসের শিশুর মৃত্যু নিয়ে রহস্য সাংবাদিক নাদিম হত্যার ৪ আসামীর রিমান্ড চেয়েছে সিআইডি নরসিংদীতে ট্রেনের ধাক্কায় কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১০ গোয়ালন্দে স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ক্লাস নিলেন ইউএনও লালমোহনের দেবীরচরে হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ সভা জীবন যুদ্ধে বাসে বাসে বাদাম বিক্রি করছে বাবাহারা ৫ বছরের আলামিন