অধিভুক্ত কোন নতুন শব্দ নয়। বিভিন্ন সময়ই শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়ন লক্ষে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। যতগুলোই আজ পর্যন্ত অধিভুক্ত হয়েছে তারমধ্য শিরোনামের দিক থেকে এগিয়ে আছে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজকে অধিভুক্ত করা হয়। অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নানান দুর্দশা। যেই বিষয় গুলো নিয়ে পূর্ব থেকেই সচেতনতা এবং সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে অধিভুক্ত করা উচিত ছিল সেটা একদমই করা হয়নি।
এবং যেসব বিষয় গুলো অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল সেই বাস্তবায়নের সফলতাও আজ পর্যন্ত চোখে দেখেনি সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বারবার তাদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় আন্দোলন করছে। হয়েছে বারবার বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে হয়রানি, অপমানিত, অপদস্ত।
এমনকি এই অধিভুক্ত হওয়ার ফলে যে দীর্ঘ সেশনজট হয়েছে তারথেকে মুক্তি পেতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। একটা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এমন যৌক্তিক আন্দোলনে তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়েছে। শুধু এখানেই অধিভুক্তির নির্মমতা নয়। অতিরিক্ত ফলাফল বিপর্যয় হওয়ার কারনে ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে।
অতিরিক্ত ফলাফল বিপর্যয়, প্রতিটা অফিসিয়াল কাজে নানান ভাবে হয়রানি, নাই সঠিক কোন তথ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে কোন সুবিধা। এছাড়াও যেই সমস্যা এখন পর্যন্ত বিরাজমান সেটা হলো ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা। এখনো বছর পেরিয়ে যায় ফলাফল প্রকাশ হতে। তাও আবার কিস্তিতে প্রকাশ করা হয়। যেমনটা ২০১৮-১৯ সেশনের ২য় বর্ষের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের পরীক্ষা শেষ হয়েছে ডিসেম্বরের শেষে। অথচ এখন পর্যন্ত ফলাফল দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে ৩য় বর্ষের ফরমপূরনের সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এই তারিখ ২ বার পেছানো হলো। এখন দেখা যাবে ফলাফল প্রকাশিত হলে অনেকেই ফেল করবে। আর করাটাও খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু প্রশ্ন হলো যেই শিক্ষার্থী ফেল করবে সে ৩য় বর্ষের পড়াশোনা এতদূর কোন কারণ ছাড়াই পড়লো এবং ফেল করার ফলে ২য় বর্ষের পড়ার সময় ও পর্যাপ্ত পেল না। অতঃপর যেটা হবে আবার ফেল করবে। শুধু রেজাল্ট ধীরগতিতে প্রকাশিত হওয়ার ফলে এমন শতশত মেধাবী শিক্ষার্থী সাত কলেজ থেকে ঝরে পড়ে। পরবর্তীতে কোন প্রাইভেট কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এখানেই শিক্ষাজীবন ইতি টানতে হয়।
এছাড়াও থাকে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে দূরত্ব। যার ফলে যেটা হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন অনেক কাজই দ্রুততার সাথে করতে পারেনা। কলেজের শিক্ষকরা দেখা যায় কোন দায়িত্ব নিতে চায়না। শিক্ষার্থীদের দেখবাল করার যে দায়িত্ব তা থেকে অনেকটাই দুরে সরে যায় তারা। কারণ তারা ভেবেই নিয়েছে পুরো দায়িত্বটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
আরেকটা বিষয় যেই উদ্দেশ্য অধিভুক্ত করা হলো সেগুলো কি আসলে প্রধান্য দেওয়া হয়? ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার কাছে মনেহয় ন্যূনতম কোন সুবিধা বাড়ে নি আজ পর্যন্ত। বরং পদে পদে বিভিন্ন অবহেলার স্বীকার হতে হয়। এবং একটা অবিভাবকহীন অবস্থার তৈরি হয়। যদিও ঢাবি কর্তৃপক্ষ এবং সাত কলেজের দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সফলতার কথা বলে। তবে একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে আমার কখনোই মনে হয়নি শিক্ষার মানের বৃহৎ কোন উন্নয়ন হয়েছে। এমনকি এখনো জোর গলায় বলা যায় সাত কলেজের শিক্ষা-কার্যক্রম এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রমের কোন পার্থক্য নেই। এমনকি ফলাফল প্রকাশে এখনো পিছিয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায়।
এখন বিষয় হলো অধিভুক্ত নিঃসন্দেহে ভালোর জন্য। কিন্তু ভালোর জন্য করে যদি এর সুফল ভোগ করতে না পারে শিক্ষার্থীরা
তবে দিনশেষে এর সফলতা কি?
সাম্প্রতিক সময়ে শোনা যাচ্ছে সরকারি সব কলেজ গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হবে। বেশ ভালো উদ্যোগ। তবে এর জন্য কি যথাযথ প্রস্তুত বিশ্ববিদ্যালয় গুলো? নাকি বিশ্ববিদ্যালয় নিজের শিক্ষার্থী পরিচালনা করতেই হিমসিম খাচ্ছে? আমাদের দেশে এবিষয়টা বেশ প্রচলিত যে হুট করে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। পরবর্তী এর ফলাফল কি হবে বা কি হতে পারে বা এর সমাধান কি এগুলো ভাবেনা। তবে এমন ভূল ফের করা যাবেনা। কেননা এমন ভুলের প্রতক্ষদর্শী সরকারি সাত কলেজের লাখো শিক্ষার্থী। এখনো তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এমনকি সুবিধা তো দুরের কথা মৌলিক যে বিষয় গুলো সমাধান করার দরকার ছিল সেগুলোও আজপর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
সুতরাং এ ভূল থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। প্রয়োজনে সময় নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন ভাবেই হুট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর এমন শতশত কলেজ চাপিয়ে দেওয়া যাবেনা। এখানে ভাবতে হবে তাদের কি চাহিদা এবং কলেজ গুলো অধিভুক্ত করলে তাদের কি কি প্রয়োজন হবে না হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যে কলেজগুলো করা হবে সকলে মিলে সুন্দর পরিকল্পনা মোতাবেক আগাতে হবে। যাতে দুই পক্ষের মধ্যে কোনরকম দূরত্ব তৈরি নাহয়। সাত কলেজ নিয়ে ঢাবির অন্যতম অভিযোগ ছিল কোন পরিকল্পনা এবং দক্ষ জনবল ছাড়াই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। সুতরাং এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করেই এমন বৃহৎ সিদ্ধান্তের দিকে আগাতে হবে। সহজকথা হলো শিক্ষার্থীদের জীবন কোন ভাবেই যেন অগোছালো করা নাহয়। তারা যেখানেই যাক যার অধিভুক্তই হোকনা কেন তাদের শিক্ষাজীবন যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারে এসব বিষয় মাথায় নিয়েই আগাতে হবে অধিভুক্তির পথে।
মো. সায়েদ আফ্রিদী
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, উদ্ভিদবিদ্যা